ভূমিকাঃ
নীল পাহাড় বইটির সন্ধান পাই বইমেলা ২০১৮ তে। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর স্টলে উপস্থিত হলাম। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান। এর বিভিন্ন কাজের মধ্যে আছে ১ টাকার আহার, ১ টাকায় ডাক্তার, ১ টাকায় আইন সেবা, সমুদ্রা সৈকত পরিষ্কার করা। এগুলোর কথা অনেকবার শুনেছি। বিদ্যানন্দ এর প্রকাশনী আছে তা আগে জানতাম না। তাই বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর উপর আগ্রহ থেকেই স্টলে যাওয়া। এদের স্টলের অনেক বইয়ের মাঝে ‘নীল পাহাড়’ এর উপর চোখ আটকে যায়। প্রকাশকের কথা অংশ পড়ে বইটার প্রতি আগ্রহ বাড়ল। ‘প্রকাশকের কথা’ অনুযায়ী এই বইটি ফেসবুকের একটি গ্রূপ থেকে নেয়া যেখালে লেখক নিয়মিত পর্বে লেখা প্রকাশ করতেন। তার লেখাগুলো একত্র করে অন্য একটি প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি না হওয়াতে ঐ প্রকাশনী আর বইটির পুনঃপ্রকাশ করেনি। বইটির প্রশংসা শুনে আর দোকানে বইটির দুষ্প্রাপ্যতা দেখে পূর্ববর্তী প্রকাশনীর অনুমতিক্রমে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। লেখক বইয়ের রয়্যালটির একটি অংশ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ দান করতে রাজী হয়েছেন। সবকিছু মিলে বইটির প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ থেকে বইটি কিনে নিলাম।
লেখক পরিচিতিঃ
লেখক সম্পর্কে আমি নিজেও খুব একটা জানি না। কেনা বইয়ের শেষ পাতায় লেখক পরিচিতি খুজতে গিয়ে দেখি লেখা আছে “বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। লেখক যুবক, নাকি বৃদ্ধ, শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ধনী নাকি গরিব এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্টাগুলোতে। কালো কালো হরফের লেখাগুলোকে লেখক সন্তান মনে করেন, সন্তানের পিতা হিসেবেই তিনি পরিচিত হতে চান।” সাথে লেখকের ফেসবুক পেজ এর লিংক দেয়া। ইন্টারনেট এ লেখক সম্পর্কে খুঁজাখুঁজি জানতে পারলাম লেখকের আরও বেশকিছু গল্প লেখা আছে। ‘তেইল্যা চোরা’, ‘জলেশ্বরী’, ‘নেপথ্যে নিমকহারাম’, একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা ইত্যাদি। লেখকের ফেসবুক পেজ এ গেলে তার সম্পর্কে এবং তার লিখা সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। লেখকের একটি সাক্ষাৎকারও আছে প্রকাশিত হয়েছে ‘এগিয়ে চলো’ নামের একটি ই-পোর্টালে।
কাহিনীসংক্ষেপঃ
বইটির মূল গল্প শুরু হয় শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় প্রধান চরিত্র ডাঃ মানিক মিত্র এর বাস যাত্রা দিয়ে। ডাঃ মানিক একজন সরকারী ডাক্তার এবং বড় হয়েছেন একটি অনাথ আশ্রমে। ঢাকায় থাকেন একজনের ফেলে যাওয়া বাড়িতে। একাকী থাকার কারনে কখনে নিজ বাড়িতে রান্না করেন না। নিয়মিত খাবার খান হোটেলে। নিজের মাকে কখনো দেখতে না পাওয়াতে সবসময় মায়ের প্রতি আকুলতা তার। নিজে অনাথ হওয়ার কারনে অন্য অনাথদের প্রতি তার সহমর্মিতা আছে। আর এই সহমর্মিতা থেকেই নিজের বেড়ে ওঠা অনাথা আশ্রমে নিয়মিত দান করেন। বর্তমান অনাথ আশ্রমের প্রধান তাকে ছোটবেলায় শিক্ষাদান করেছেন এবং নিজ সন্তানের মত দেখেন।
ডাঃ মানিক কে হাসপাতালের সবাই খুব পছন্দ করে। ঘটনাক্রমে হাসপাতাল প্রধানের সাথে বদানুবাদের প্রেক্ষাপটে তাকে বান্দরবানে ট্রান্সফার করে দেয়া হয়। বান্দরবানে মৃতপ্রায় সরকারী হাসপাতাল কে ডাঃ মানিক পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু দেখা যায় আদিবাসীদের কবিরাজি আর ঝাড়ফুঁকেই বিশ্বাস বেশি। হাসপাতালে রোগী আসতে চায় না। আর এর মধ্যেই চলছে আদিবাসী আর বাঙ্গালীর মধ্যে রেষারেষি। এই রেষারেষি থেকেই পাহাড়ীদের উপর চলে হত্যাযজ্ঞ। মানিক পাহাড়ীদের প্রধানের মেয়ে ‘ক্রাসিমা’ কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসা করে। কিছুটা সুস্থ হলে বাঙ্গালীদের প্রতি অবিশ্বাস থেকে পালিয়ে যায়।
একটা সময় মানিক অনাথ আশ্রমের প্রধানের কাছ থেকে একটি চিঠি পায়। চিঠি থেকে মানিক জানতে পারে তার সত্যিকার মায়ের সন্ধান যে এই মুহূর্তে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। চিঠি পেয়ে মানিক রওনা হয় মায়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে মানিককে অপহরন করে পাহাড়ী সশস্ত্র দল। তাদের মাঝে মানিক আবিস্কার করে ‘ক্রাসিমা’ কে। ক্রাসিমার মধ্যে ভালবাসা খুজে পায় মানিক। ক্রাসিমার সাহায্য নিয়ে মানিক পালিয়ে যায়। পথিমধ্যে মানিক আবিস্কার করে নীল ফুলে ছেয়ে থাকা নীল পাহাড়। পালিয়ে এসে হাসপাতালে নিজের মা কে খুজে পায় না মানিক। মা তার আগের হাসপাতাল ছেড়ে গেছে।
পর্যালোচনাঃ
এক কথায় বলতে গেলে বইটি অসাধারন। একই বইতে ফুটে উঠেছে কষ্টের কথা, ভালবাসার কথা, অপ্রাপ্তির বেদনা, পাহাড়ের সৌন্দর্য। একই সাথে উঠে এসেছে সরকারী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পাহাড়ি ও বাঙ্গালীর বিদ্বেষ, ধর্ম বৈষম্য। রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা এ বইয়ের যেন একই অঙ্গে বহুরুপ। গল্পের কাহিনী প্রবাহ হয়েছে সুনিপুনভাবে। গল্পের বর্ণনা খুবই সুন্দর। পড়লে মনে হয় যেন নিজের সামনেই সবকিছু ঘটছে। আসলে নিজে না পড়লে এ বই সম্পর্কে বোঝা যাবে না।
রেটিংঃ
বইটিকে আমি ৯/১০ দিব। আমার রেটিং শুধু আমার ভালোলাগা থেকে। আমার এ রেটিং অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। তবে এটুকু বলতে পারি বইটি সবার ভাল লাগবে।
বইটি কিনতেঃ রকমারী.কম এ দেখুন।
কিছু ইনফরমেশন ভুল আছে ভাই। লেখক কোথাও তাঁর লেখা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করেন নি৷ আসলে বইটি কাকলী থেকে প্রকাশিত হবার পর সেভাবে পাঠকের নজরে পড়ে নি৷ পরে এটি পিডিএফে ছেড়ে দেয়া হয়৷ তারপর অনেকেই পিডিএফ পড়ে হার্ড কপির সন্ধানে উৎসাহী হয়। তার সূত্র ধরেই বিদ্যানন্দ এগিয়ে আসে।
আমি কিন্তু আমার লিখাতেই বলেছি এ ব্যাপারটা।
‘প্রকাশকের কথা’ অনুযায়ী এই বইটি ফেসবুকের একটি গ্রূপ থেকে নেয়া যেখালে লেখক নিয়মিত পর্বে লেখা প্রকাশ করতেন। তার লেখাগুলো একত্র করে অন্য একটি প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি না হওয়াতে ঐ প্রকাশনী আর বইটির পুনঃপ্রকাশ করেনি। বইটির প্রশংসা শুনে আর দোকানে বইটির দুষ্প্রাপ্যতা দেখে পূর্ববর্তী প্রকাশনীর অনুমতিক্রমে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।