আমার আর রিংকীর বিয়ের ৬ বছর হল গতকাল। দেখতে দেখতে যে কিভাবে ৬ বছর পার হয়ে গেল টেরই পেলাম না। বলা হয় যে সুখের সময় অনেক দ্রুত কেটে যায় আর দু:ক্ষের সময় নাকি কাটতেই চায় না। সে হিসেবে চোখের পলকে ৬ বছর অতিবাহিত হওয়া অস্বাভাবিক না।
আমার আর রিংকির বিয়েটা এত সহজ ছিল না। দু পরিবারকে মানাতে অনেক সময় লেগেছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালোবাসারই জয় হয়ে ছিল। সে ভালবাসার কোন কমতি হয় নি আজ পর্যন্ত। বরং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে।
ইংরেজিতে লাইফ-পার্টনার বলতে যে বুঝায়, রিংকী বাস্তবিক ভাবেই তাই। বিয়ের পর থেকে আমার যত অর্জন তার সবটাতেই আছে তার প্রেরনা এবং উৎসাহ। আমার সব টেনশন ওর সাথে শেয়ার না করলে টেনশন কমে না। কোন সমস্যা হলে ও আমাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। সারা দিনের সব কিছু শেয়ার না করলে মনে হয় পেটে খাবার হজম হয় না। ওর জন্য ও বেপারটা একই রকম। তবে আমার মনে হয় আমি ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি। আমার নিজের ব্যাপারে সব কিছু ওর উপর দিয়ে আমি ব্যাস্ত হয়ে পরেছি নিজের কর্মজীবন নিয়ে। দেরি করে বাসায় ফেরা, ছুটির দিনে কাজ নিয়ে বসে থাকা, এখানে ওখানে মিটিং সিটিং। এসবই সে সহ্য করে যায়। নিজের অফিস নিয়ে ব্যাস্ত থাকার পরও কিভাবে যে আমার সব কিছুর খেয়াল রাখে তা সুপার ওমেন না হলে মনে হয় সম্ভব না।
বিয়ের ৬ বছরে অনেক কিছু পার করেছি আমরা। রিংকীর এক্টপিক প্রেগন্যান্সির ফলে টিউব র্যাপচার থেকে কোমায় চলে যাওয়া, সার্জারী এবং স্লো রিকভারী, আমার মায়ের ক্যান্সার নির্ণয়ের থেকে শুরু করে ক্যান্সারের বিপক্ষে ২ বছরের এক কঠিন যুদ্ধে পরাজয়, করনা আক্রান্ত হওয়া এবং কঠিন এক সময়ে নিরাপদ চাকরি ইস্তফা দিয়ে নতুন ফার্ম এ যোগ দেয়া এরকম অনেক কঠিন সময় পার করেছি আমরা। তবু আমাদের ভালোবাসার কমতি হয়নি।
আমার একটা অন্যতম প্রিয় কাজ হচ্চে রিংকীকে জ্বালানো বা বিরক্ত করা। বেচারি নিরবে সহ্য করে যায়। মাঝে মাঝে অনেক রাগ করে, কথা বলে না। তখন আমিও রাগ করি কথা বলি না। দু দিন পার হলেই দুজনের মনই আকু-পাকু করে। এতএব মীমাংসা। এভাবেই চলে যাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা। প্রজাপতির ডানায় ঊড়ে গেছে ৬ টি বছর। আমাদের এ জীবনের বাকি সময়ের সবটুকু ভালোবাসায় থাকুক ভরপুর। এ জীবন তো বটেই পরবর্তী জীবনেও একসাথে জান্নাতে থাকতে চাই।