কবে জাহাজে চেপেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। কয়েক ঘণ্টা হতে পারে অথবা কয়েক দিন কিংবা কয়েক বছর। এখানে আসলে দিনক্ষণ ঠাহর করা যায় না। এখানে সময় থেকে থাকে। শুধু জাহাজটাই চলতে থাকে। জাহাজ কবে গন্তব্যে পৌছাবে আমি সে অপেক্ষা করছি।
হঠাৎ কে যেন দূরে চেঁচিয়ে জানাল কিছুক্ষণের পরেই জাহাজ গন্তব্যে পৌছাবে। গন্তব্যে পৌছানোর খবর শুনে যাত্রীদের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। চাপা একটা উত্তেজনা দেখা দিল সবার মধ্যে। কেউ কেউ অবিশ্বাসের আওয়াজ করতে লাগল। আমার কেন যেন বিশ্বাস হতে চাইল না। তবুও আগ্রহ নিয়ে জাহাজের বাইরের দিকে তাকালাম। কিন্তু চারপাশে শুধুই পানি। আমাদের গন্তব্যের কোন চিহ্নও দেখলাম না। পাশে একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিলেন। ভাবলেশহীন চেহারা করে জাহাজেত বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তারদিকে তাকিয়ে বললাম “এখনও তো পৌছানোর কোন লক্ষণ দেখছি না”। ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন “এইতো চলে আসেছি। সামনের বাঁকটা পেড়োলেই পৌছে যাব আমরা”।
আশেপাশে লোকজনের ব্যস্ততা বেড়েছে ইতিমধ্যে। সবাই নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। আমার অবশ্য এসবের ঝামেলা নেই। শুন্য হাতেই বেরিয়েছি আমি। আমি চারপাশের সবার ব্যস্ততা দেখছি আর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি জাহাজ থামার। কিছু অতি উৎসাহী লোক ভিড় করছে জাহাজের দরজার সামনে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে জাহাজ ভিড়লে সবার প্রথমে ওদেরকেই নামতে হবে। আমিও এগিয়ে গেলাম তাদের সাথে। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি জাহাজ ভেড়বার। ধীরেধীরে আরও অনেক লোক এসে দাঁড়াল দরজার সামনে। সবার লক্ষ্য একটাই, যত দ্রুত সম্ভব এই জাহাজ থেকে নামার। দীর্ঘ যাত্রা তাদের মধ্যে ক্লান্তি এনে দিয়েছে। সময় পার হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা একটু একটু করে বিচলিত হতে শুরু করেছে। সবাই অপেক্ষা করছে এই উদ্দেশহীন জাহাজটির গন্তব্যে পৌছার। কিন্তু জাহাজ চলছেই।
বি.দ্র.: ইহা একটি ছোট ও কাল্পনিক গল্প!